প্রতিবেদন: বাজার ডেস্ক | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
দেশের বাজারে চালের দাম কমার প্রবণতা দেখা গেলেও সাধারণ ক্রেতারা এখনো খুচরা পর্যায়ে তেমন স্বস্তি পাচ্ছেন না। রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোতে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম গত এক সপ্তাহে বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে খুচরা বাজারে সেই কমতির প্রভাব পড়েনি বলেই অভিযোগ উঠেছে।
রাজধানীর শ্যামবাজার, সূত্রাপুর ও নিউমার্কেট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মিনিকেট হিসেবে পরিচিত সিদ্ধ চালের বর্তমান দাম প্রতি বস্তা ২ হাজার ৮০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। পাইজাম চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকায়, যেখানে গত সপ্তাহে তা ছিল ২ হাজার ৯০০ টাকা। কাটারিভোগ চালের দাম কমে এসেছে ১ হাজার ৭০০ টাকায়, যা আগে ছিল ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকা। নাজিরশাইল চালের দামও কমেছে প্রায় ৩০০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকায়। স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকায়।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, এক মাসের ব্যবধানে সরু চালের দাম কমেছে ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং মাঝারি মানের চালের দাম কমেছে ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ। খাদ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট চাল আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ টন, যার মধ্যে সরকারিভাবে এসেছে ৮ লাখ ৩৫ হাজার টন এবং বেসরকারিভাবে ৪ লাখ ৭০ হাজার টন। আমদানিকৃত চালের মধ্যে ৬ লাখ টন এসেছে ভারত থেকে, বাকিগুলো মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তান থেকে। সরকার নতুন করে ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন চাল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ চাল আসায় সরবরাহ বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে পাইকারি দামে। তবে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে সামনে আরও দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। শ্যামবাজারে চাল কিনতে আসা নিলয় আহমেদ নামে এক ভোক্তা জানান, পাইকারি পর্যায়ে দাম কমলেও খুচরায় এখনো তেমন পার্থক্য দেখা যায়নি। তিনি মনে করেন, বাজার তদারকি বাড়ানো হলে ভোক্তারা দ্রুতই এই স্বস্তি অনুভব করবেন।
সূত্রাপুরের এক চাল ব্যবসায়ী শেখ মো. জহির বলেন, প্রচুর ভারতীয় চাল বাজারে এসেছে এবং দেশীয় চালেরও মজুত ভালো। সামনে আমন ধান উঠলে সরবরাহ আরও বাড়বে এবং দাম আরও কমবে। চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন জানান, আগে বাজার নিয়ন্ত্রণ করত কিছু বড় গ্রুপ, এখন যেহেতু যে কেউ চাল আমদানি করতে পারছে, প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে এবং তাতে দাম কমে আসছে।
সব মিলিয়ে পাইকারি বাজারে চালের দাম কমার ইতিবাচক ইঙ্গিত মিললেও সাধারণ মানুষের জন্য খুচরা পর্যায়ে তা এখনো বাস্তব হয়ে ওঠেনি। সংশ্লিষ্ট মহলের তদারকি ও সচেতন উদ্যোগই এই ব্যবধান ঘোচাতে পারে।