আসামি না হয়েও জুলাই হত্যা মামলায় কারাগারে প্রবাসী, পাচ্ছেন না জামিন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ফেনী

ফেনীর সৌদি প্রবাসী নজরুল ইসলাম হাজারী ওরফে সাদ্দাম কোনো মামলার আসামি নন—এমন দাবি তাঁর পরিবারের। কিন্তু এর পরও গত সাড়ে তিন মাস ধরে তিনি কারাগারে রয়েছেন। পরিবারের অভিযোগ, যুবলীগ নেতা নুরুল হুদা ওরফে রিয়াদ নামে প্রকৃত আসামির পরিবর্তে তাঁকে ভুলক্রমে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। উচ্চ আদালত জামিন দিলেও রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধিতায় তাঁর মুক্তি আটকে গেছে।

🔍 ভুল পরিচয়ে গ্রেপ্তার

গত ১৬ জুন ফেনী শহর থেকে নজরুল ইসলাম হাজারীকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। পরে তাঁকে ২০২৪ সালের জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দায়ের হওয়া দুটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অথচ মামলার এজাহারে যাঁর নাম রয়েছে, সেই নুরুল হুদা ওরফে রিয়াদ বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন বলে পরিবার ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

নজরুলের ভাই জহিরুল ইসলাম ফাহাদ হাজারী বলেন,

“আমার ভাইয়ের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। তাঁর সঙ্গে স্থানীয় যুবদল নেতাদের পূর্ব বিরোধ থাকায় একটি চক্রান্তে তাঁকে জড়ানো হয়েছে।”

📑 নামের মিলেই কাল হলো?

মামলার এজাহারে আসামির নাম ‘রিয়াদ’, পিতার নাম ‘মৃত আবুল খায়ের’, ঠিকানা ‘মধ্যম ধলিয়া, ফেনী সদর’।
নজরুলের নাম ‘নজরুল ইসলাম হাজারী’, পিতা ‘আবুল খায়ের মিন্টু হাজারী’, ঠিকানা ‘মাছিমপুর, ধলিয়া ইউনিয়ন’।

এ প্রসঙ্গে নজরুলের বোন ফেরদৌস আরা জানান,

“নাম আর বাবার নামের আংশিক মিল থাকায় নজরুলকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। অথচ প্রকৃত আসামি রিয়াদ ফেনীর পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তি।”

🗣️ র‍্যাবের অবস্থান

র‍্যাব–৭ ফেনী ক্যাম্পের অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার মো. মিজানুর রহমান জানান,

“আমরা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রিয়াদকে (নজরুল ইসলাম হাজারী) গ্রেপ্তার করেছি। মামলার বাদী ও পুলিশ নিশ্চিত করেছে—তিনি-ই রিয়াদ।”

⚖️ জামিন হলেও মুক্তি নয়

নিম্ন আদালতে জামিন নামঞ্জুরের পর উচ্চ আদালতে আবেদন করেন নজরুলের আইনজীবীরা। ২৪ আগস্ট উচ্চ আদালত থেকে জামিন মঞ্জুর হলেও, ২৬ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধিতায় জামিন স্থগিত হয়।

ফেনী জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মেজবাহ উদ্দিন খান বলেন,

“আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল—নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন। এরপরও কিছু ঘটনা আমাদের হাতের বাইরে রয়ে যাচ্ছে।”

🧾 বাদী পক্ষের ভূমিকা ও বিতর্ক

দুটি মামলার বাদী যুবদলের কর্মী মহিউদ্দিন ও আফসার হোসেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তাঁরা যুবদল নেতা জাকির হোসেনের অনুসারী, যাঁর সঙ্গে নজরুলদের পারিবারিক বিরোধ রয়েছে।
মহিউদ্দিনের দাবি,

“আমার মামলার আসামি এলাকায় ‘রিয়াদ’ নামে পরিচিত। তবে গ্রেপ্তার বিষয়ে র‍্যাবের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি।”

অন্যদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমিন বলেন,

“বাদী আসামিকে নিজেই শনাক্ত করেছেন। পরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।”

📉 রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা?

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনকেন্দ্রিক ফেনীতে দায়ের হওয়া ২২টি মামলার বেশিরভাগেই আসামি বাছাইয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা প্রভাব রেখেছেন। এদের মধ্যে যুবদল নেতা জাকির হোসেনের নাম বারবার উঠে আসে।

প্রবাসী নজরুলের পরিবার বলছে,

“জমিজমা নিয়ে জাকির হোসেনের আত্মীয়দের সঙ্গে আমাদের বিরোধ ছিল। সেই সুযোগ নিয়েই আমাদের ভাইকে ভুল মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।”

Check Also

“নিজেদের সম্মানটুকু কলঙ্কিত করবেন না” — এনসিপিকে ফারুকের সতর্ক বার্তা

জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) …

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।