প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৫
ঢাকার মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে একটি পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি কেবল দুর্ঘটনা নয়— এটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও মালিকদের চরম গাফিলতি ও অবহেলার কারণে ঘটে যাওয়া একটি কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড।
কী ঘটেছিল?
ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, গুদামের রাসায়নিক থেকে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে অনেকেই অচেতন হয়ে যান। আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি, যখন জানা যায় কারখানার ছাদের দরজা তালাবদ্ধ ছিল—শ্রমিকরা আটকা পড়েন, অনেককে জানালা ভেঙে প্রাণ বাঁচাতে হয়।
আগুনে পুড়ে যাওয়া লাশ, নেই কোনো নিরাপত্তা
পুড়ে যাওয়া লাশগুলো এমনভাবে বিকৃত হয়েছে যে শনাক্ত করা যাচ্ছে না কোনটি কার। আহতরা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। কারখানা ও গুদামের ছিল না অগ্নিনিরাপত্তা সনদ বা জরুরি বহির্গমন পথ—যা স্পষ্টতই আইন লঙ্ঘন।
অবৈধ গুদাম, নিষ্ক্রিয় প্রশাসন
রাসায়নিক গুদামটি অবৈধ এবং এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস তিনবার নোটিশ দিয়েছিল। কিন্তু নোটিশ দিয়েই দায় শেষ, এমনটি কি গ্রহণযোগ্য? একই ভবনে আবাসিক এলাকা, পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদাম— এসবই ছিল নিয়ন্ত্রণহীন।
দায়ী কে?
এই ঘটনায় কারখানা ও গুদামের মালিকের পাশাপাশি দায়ী—
- ফায়ার সার্ভিস
- কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর
- বিস্ফোরক অধিদপ্তর
- পরিবেশ অধিদপ্তর
- সিটি করপোরেশন
২০১০ সালের নিমতলী ও ২০১৯ সালের চুড়িহাট্টা ট্রাজেডির পর আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরানোর সুপারিশ করা হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতিই এসব বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অবহেলার চরম মূল্য দিচ্ছে শ্রমিক
নিহতদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, দ্রুত ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে লাশ হস্তান্তরের দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে, গাফিলতিতে জড়িত প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়।
সরকার ও রাজনৈতিক দলের অবহেলা
শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো সরকারের নিকট উপেক্ষিত। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দেখা যায়নি। বাস্তবতা হলো, শ্রমিকরা উন্নয়নের আলো থেকে এখনো বঞ্চিত।
শিয়ালবাড়ির অগ্নিকাণ্ড কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক কাঠামোর ব্যর্থতায় গঠিত একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় ঠেকাতে হলে, এখনই প্রয়োজন কঠোর আইনি পদক্ষেপ, দায়ীদের শাস্তি এবং শ্রমিকবান্ধব নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা।