পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। এতে অন্তত ৭০০ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। বসতবাড়ি, ফসলি জমি, দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সামাজিক অবকাঠামো পদ্মার গর্ভে হারিয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোসলেম শেখ (৬৫) বলেন, “২০ শতাংশ জমি ও বসতবাড়ি পদ্মায় গেছে। এখন নদীর তীরে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলা ছাড়া কিছুই করার নেই।”
২০১০ সালে পদ্মার চরে গড়ে ওঠে আহম্মদ মাঝিকান্দি, মনসুর মোল্যাকান্দি ও আলীম উদ্দিন ব্যাপারীকান্দি নামে তিনটি গ্রাম। সাড়ে চার হাজার বিঘা জমিতে চলত কৃষিকাজ। ৭০০ পরিবারে ছিল সাড়ে চার হাজার মানুষ। শিশুদের পড়াশোনার জন্য গড়ে ওঠে পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রিজিয়া আমিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
গত দুই বছর ধরে পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। গত বছরের আগস্টে পাইনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এ বছরের ২৮ আগস্ট রিজিয়া আমিন বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিক নদীগর্ভে চলে যায়। এ পর্যন্ত হারিয়ে গেছে সাড়ে চার হাজার বিঘা জমি, অন্তত ২০টি দোকান ও শত শত বাড়িঘর।
বহু পরিবার বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অধিগ্রহণ করা জমিতে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছে। তবে ওই জমি ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ পেয়েছেন তাঁরা। ফলে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। গৃহহীন হাসেম মৃধা বলেন, “আমার সাত বিঘা জমি আর বাড়ি ছিল। সবই পদ্মায় গেছে। এখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সরকারি জমিতে খুঁটি গেড়ে আছি।”
বিদ্যালয় দুটি অন্যত্র স্থানান্তর হলেও শিক্ষার্থী সংকটে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। রিজিয়া আমিন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আহম্মেদ বলেন, “চোখের সামনে বিদ্যালয় নদীতে হারাতে হয়েছে। এখন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না।”
ভাঙন রোধে স্থানীয়দের বহুবার মানববন্ধনের পরও পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। পুনর্বাসনেও নেই সরকারি উদ্যোগ।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় জানান, “এ বছর পদ্মার দক্ষিণ তীরে সেতুর অবকাঠামো থাকায় সেখানে ভাঙন ঠেকানো হয়েছে। চরের দিকটায় কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং পুনর্বাসনের জন্য খাস জমি খোঁজা হচ্ছে।”
পদ্মার গর্ভে বিলীন হওয়া পরিবারগুলোর এখন একটাই প্রশ্ন—“আমরা কোথায় যাব?”