আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১২ অক্টোবর ২০২৫
গাজা উপত্যকায় দীর্ঘ যুদ্ধের পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ধ্বংসস্তূপে পরিণত অঞ্চলটি পুনর্গঠনে কয়েক প্রজন্ম সময় লাগতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি জানান, গাজায় ফেরত আসা বাসিন্দারা যেসব এলাকায় ফিরছেন, সেখানে শুধুই ধ্বংস ও অব্যবস্থাপনার চিত্র।
জাতিসংঘের আবাসন অধিকারবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার বালাকৃষ্ণ রাজাগোপাল গতকাল শনিবার এক সাক্ষাৎকারে আল-জাজিরাকে বলেন, “উত্তর গাজায় ফিরে আসা লোকজনের মধ্যে আমরা যুদ্ধের মানসিক প্রভাব ও গভীর ক্ষতের চিহ্ন স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি।”
ধ্বংসস্তূপে ফিরে যাত্রা
যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর উত্তর গাজার বহু বাসিন্দা নিজ নিজ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। কিন্তু তারা দেখতে পাচ্ছেন, বাড়িঘর, অবকাঠামো এবং আশপাশের সম্পূর্ণ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, গাজায় ৯২ শতাংশ আবাসিক ভবন আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে।
রাজাগোপাল বলেন, “এ অবস্থা থেকে পুনর্গঠন করা একদিনে বা এক দশকে সম্ভব নয়। এর জন্য কয়েক প্রজন্ম সময় লাগবে।”
তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েলের অবরোধ যদি অব্যাহত থাকে, তবে জরুরি সহায়তা পৌঁছানোও সম্ভব হবে না। প্রবেশপথ নিয়ন্ত্রণ না ছাড়লে পুনর্গঠন দুরূহ হয়ে পড়বে।”
মানবিক বিপর্যয় ও ‘ডোমিসাইড’
গাজার বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘মানবিক বিপর্যয়’ হিসেবে বর্ণনা করে রাজাগোপাল বলেন, “এখানে যা ঘটেছে, তাকে ‘ডোমিসাইড’ বলা যেতে পারে।” ডোমিসাইড অর্থ—গণহারে মানুষের বাড়িঘর ধ্বংস করে তাদের বাস্তুচ্যুত করা। তাঁর মতে, গাজায় বসতবাড়ি ধ্বংস করে বসবাসের অনুপযোগী করে তোলাই ইসরায়েলের জাতিহত্যার কৌশলের একটি অংশ।
দ্বিতীয় নাকবা?
রাজাগোপাল ১৯৪৮ সালের ‘নাকবা’ বা ফিলিস্তিনিদের গণউচ্ছেদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “আজ যা হচ্ছে, তা যেন তারই পুনরাবৃত্তি। এটি একটি সুপরিকল্পিত উচ্ছেদ এবং ধ্বংসযজ্ঞ।”
দুই বছরের যুদ্ধে প্রাণহানি
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধের ফলে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৭ হাজার ৭০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। লক্ষাধিক মানুষ আহত বা পঙ্গু হয়েছেন। অবরোধ, খাদ্য ও ওষুধের অভাবে এখনো বহু মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, অবিলম্বে ইসরায়েলকে গাজায় ত্রাণ, তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে, অন্যথায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
গাজা এখন আর শুধু একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল নয়, বরং এটি মানবতার চরম পরীক্ষার ক্ষেত্র। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এই ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ফিলিস্তিনিদের কয়েক প্রজন্ম লেগে যাবে—এটাই জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের সতর্ক বার্তা।