আন্তর্জাতিক ডেস্ক
তারিখ: ১৬ অক্টোবর ২০২৫
পশ্চিম তীরের মাসাফের ইয়াত্তার অঞ্চলের একটি ছোট গ্রাম খাল্লেত আল-ডাবা। শান্তিপূর্ণ এই গ্রামটি ২০২৫ সালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চতুর্থবারের মতো ধ্বংসযজ্ঞের মুখে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এটি ১৯৪৮ সালের নাকবার পুনরাবৃত্তি—একটি ‘নতুন নাকবা’।
চারবার বাড়িঘর ধ্বংস, গন্তব্য গুহা ও তাঁবু
গত ৫ মে ইসরায়েলি সেনারা ভোরে গ্রামের চারপাশ ঘিরে ফেলে। বুলডোজার, সাঁজোয়া গাড়ি আর অস্ত্রধারী সেনাদের সামনে দাঁড়াতে পারেনি কেউ। নারী-শিশুদের ঘর থেকে বের করে এনে সূর্যের তাপে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। একে একে ধ্বংস করা হয় তাদের ঘরবাড়ি, সৌর প্যানেল, পানির ট্যাংক, শৌচাগার, এমনকি রাস্তাঘাটের বাতিও।
স্থানীয় কাউন্সিলপ্রধান মোহাম্মদ রাবিয়া বলেন,
“আমরা এখন প্রস্তরযুগে বাস করছি। গুহা আর তাঁবুতে থাকছি। কিন্তু কেউ গ্রাম ছাড়েনি।”
বাস্তুচ্যুতি নয়, জাতিগত নির্মূলের অংশ?
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই এলাকা একটি সামরিক প্রশিক্ষণ অঞ্চল (ফায়ারিং জোন ৯১৮)। তবে অধিকারকর্মীরা বলছেন, এটি মূলত ফিলিস্তিনিদের ওই এলাকা থেকে ধাপে ধাপে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের ব্যবস্থাপক ফ্রেডেরিক ভ্যান ডোঙ্গেন বলেন,
“মাসাফের ইয়াত্তায় ইসরায়েলের অভিযান মূলত জাতিগত নির্মূলের বড় একটি পরিকল্পনার অংশ।”
“আমি মরব, কিন্তু যাব না”
৬৫ বছর বয়সী সামিহা মুহাম্মদ আল-ডাবাবসেহ জন্ম থেকেই খাল্লেত আল-ডাবায় আছেন। তাঁর ঘর এ পর্যন্ত চারবার ধ্বংস করা হয়েছে। একবার নিজ হাতে গুহা খুঁড়ে বসবাস শুরু করেন, সেটিও ১৭ সেপ্টেম্বর ধ্বংস করে দেয় সেনারা।
তিনি বলেন,
“আমি যদি এখান থেকে যাই, আমি মরব। এখানকার মাটি আমার প্রাণ।”
ভয়ের মধ্যে রাত, প্রতিরোধে প্রতিজ্ঞা
সামিহার ছেলে মুজাহিদ তিন সন্তান, স্ত্রী ও আরও ১১ আত্মীয় নিয়ে একটি গুহায় থাকেন। তিনি বলেন,
“আমার শিশুরা রাতে বুলডোজারের স্বপ্ন দেখে। ঘর নেই, বিদ্যুৎ নেই, নিরাপত্তা নেই।”
তবু এই পরিবারগুলোর একটিও এখনও এলাকা ছাড়েনি।
একটি গ্রাম, একটি প্রতীক
মাত্র ১২০ জনের বসতি খাল্লেত আল-ডাবা এখন গুহা, তাঁবু আর ধ্বংসস্তূপে ভরা। কিন্তু এখানকার মানুষেরা এটিকে প্রতিরোধের প্রতীক বানিয়ে রেখেছেন। স্থানীয়দের ভাষায়,
“এটা শুধু ঘর ভাঙা নয়, জীবন ভাঙার চেষ্টা। কিন্তু যতবার ঘর ভাঙে, ততবার আমরা দাঁড়িয়ে যাই।”
পশ্চিম তীরে এই ছোট গ্রামটি এখন ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের অদম্য প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে। সাত দশকের বেশি সময় ধরে চলা সংগ্রামে এই গ্রামের গল্প যেন ফিলিস্তিনিদের বৃহত্তর বাস্তবতারই প্রতিচ্ছবি।