নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৫
তিন দফা দাবিতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজও অবস্থান নিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরা। দাবি আদায়ে আজ (বুধবার) রাতের মধ্যেই সরকার থেকে প্রজ্ঞাপন জারি না হলে রাস্তায় নেমে আন্দোলন আরও কঠোর করার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
বিক্ষোভকারীদের প্রধান দাবি—মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া (ন্যূনতম তিন হাজার টাকা) প্রদান। পাশাপাশি শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশে উন্নীত করার দাবিও রয়েছে।
এর আগে গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করলেও পুলিশি বাধায় সেখানে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি শিক্ষক-কর্মচারীরা। সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ও লাঠিপেটার মুখে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরে সোমবার থেকে তাঁরা শহীদ মিনারে অবস্থান শুরু করেন।
সচিবালয়ে বৈঠক, শাহবাগ অবরোধ আপাতত স্থগিত
আজ বেলা ১১টার পর থেকেই শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের ঘোষণা অনুযায়ী দুপুর ১২টায় শাহবাগ মোড় অবরোধের কর্মসূচি থাকলেও তা শুরু হয়নি। শিক্ষকদের একাধিক প্রতিনিধির সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক চলায় তারা পরবর্তী পদক্ষেপ স্থগিত রেখেছেন।
মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা বলছেন, যদি আজকের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে দাবির বিষয়ে কোনো ইতিবাচক প্রজ্ঞাপন না আসে, তবে তাঁরা শাহবাগসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নেবেন।
শিক্ষকদের ক্ষোভ ও হতাশা
আন্দোলনে অংশ নিতে কুমিল্লার বরুড়া থেকে আসা একবাড়িয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক হাবিবুর রহমান আল ফরিদী বলেন,
“আমাদের বাড়ি ভাড়া মাত্র এক হাজার টাকা। আমরা সেটি ২০ শতাংশ করার কথা বলতেই পুলিশের হামলার শিকার হলাম। একটা ম্যাট্রিক পাস পুলিশ সদস্য ৪৫ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া পায়, আর আমরা শিক্ষক হয়ে ২০ শতাংশ চাইলে সেটা বেশি হয়ে যায়?”
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী থেকে আসা সেরাজাবাদ রানা শফিউল্লাহ কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক কাররাম মুনিরা বলেন,
“আমরা রাস্তায় থাকতে চাই না। আমরা শ্রেণিকক্ষে থাকতে চাই। শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকার যদি শিক্ষার্থীদের কথা ভাবে, তাহলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”
মঙ্গলবারের মিছিলেও বাধা
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে শহীদ মিনার থেকে সচিবালয় অভিমুখে মিছিল শুরু করলে হাইকোর্ট মাজারসংলগ্ন গেটেই পুলিশের বাধার মুখে পড়ে তা। শিক্ষকরা সেখানেই দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন।
পরবর্তী করণীয় কী?
বিক্ষোভরত শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সচিবালয়ে চলমান বৈঠক শেষে কী সিদ্ধান্ত হয়, তার ওপরই নির্ভর করছে তাঁদের পরবর্তী কর্মসূচি। তবে আজকের মধ্যেই দাবি বাস্তবায়নে কোনো ঘোষণা না এলে শাহবাগ অবরোধসহ আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন বলে জানিয়ে রেখেছেন তাঁরা।
প্রেক্ষাপট
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষকদের মতে, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে তাঁদের বর্তমান ভাতাদি টিকে থাকা দায় করে তুলেছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন পেলেও বিভিন্ন ভাতা খাতে সরকারি কর্মচারীদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে তাঁরা।