১১ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীর চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ সাব্বির ফয়েজ শুনানি শেষে রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এরপর আদেশ শুনে বেঞ্চে বসা এনায়েত করিম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হেলে পড়েন।
সে সময় পুলিশের কয়েকজন সদস্য তাকে ধরে বেঞ্চে বসান। তাকে পানি ও মিষ্টি চকলেট দেওয়া হয়। এরপর এনায়েত করিমকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি নেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ এসআই রিপন মোল্লা। তখন এনায়েত করিম বলেন, তিনি ঠিক আছেন। এজন্য তাকে আর হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। পরে তাকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এ বিষয়ে হাজতখানার ইনচার্জ এসআই রিপন মোল্লা বলেন, আমরা এনায়েত করিমকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তবে আসামি জানিয়েছেন তিনি ঠিক আছেন। এজন্য তাকে আর হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। তবে তাকে স্যালাইন, হালকা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। এখন তিনি আগের চেয়ে সুস্থ আছেন।
এদিন কারাগার থেকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম তাকে গ্রেপ্তার দেখানোসহ পাঁচদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তার চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। এনায়েত করিমের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, বেনজীর আহমেদের বিদেশে পাচার করা অর্থের সাথে এনায়েত করিম চৌধুরীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। বেনজীর আহমেদ কর্তৃক অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করা অর্থের অবস্থান, বিনিয়োগের তথ্য, মালিকানা এবং মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার পাঁচদিনের রিমান্ডের প্রয়োজন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি দুদকের উপপরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতে বেনজির, তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বেনজীর আহমেদ তার অপরাধলব্ধ ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদে উত্তোলনের পর কোথাও বিনিয়োগ করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অর্থ উত্তোলনের পরই বিদেশে চলে যান। ফলে নগদে উত্তোলিত অপরাধ লব্ধ আয়ের প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন বা ছদ্মাবৃত্ত করার লক্ষ্যে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪(৩) ধারা এবং দণ্ডবিধি ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বেনজীর আহমেদ।
বেনজির ও তার স্ত্রী-কন্যারা ২০২৪ সালে বিভিন্ন সময় তাদের নামে দীর্ঘদিনের এফডিআর হিসাব মেয়াদোত্তীর্ণের আগেই একযোগে উত্তোলন করেছেন। এ এফডিআরের অর্থের গ্রহণযোগ্য কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। যা বেনজীর আহমেদ র্যাবের মহাপরিচালক ও পুলিশের আইজিপিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। এ অর্থ উত্তোলনের পর কোথাও বিনিয়োগ করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর আগে গত ডিসেম্বরে ৭৪ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বেনজীর আহমেদ এবং তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি মামলা করে দুদক।