নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫
রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক গুদামের মূল ফটকের তালা ভেঙে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। তবে ভেতরে এখনো বিপজ্জনক মাত্রায় বিষাক্ত ধোঁয়া রয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ফলে পুরোপুরি অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি।
আজ বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলে ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. নজমুজ্জামান।
তিনি বলেন,
“আমরা সেফটি নিশ্চিত করে কেমিক্যাল স্যুট পরে গুদামের মূল গেটের তালা খুলেছি। ভেতরে প্রচণ্ড ধোঁয়া রয়েছে। এই মুহূর্তে ভেতরে প্রবেশ ঝুঁকিপূর্ণ। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
বিষাক্ত গ্যাসে স্বাস্থ্যঝুঁকি
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুনে পুড়ে যাওয়া রাসায়নিক উপাদান থেকে বিভিন্ন ধরনের টক্সিক গ্যাস সৃষ্টি হয়েছে, যা ইতিমধ্যে বাতাসে মিশে গেছে। এই গ্যাসে শ্বাস নিলে ত্বক, ফুসফুস ও হার্টে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
অভিযানে আসবে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল
ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে এসে গুদামের অবস্থা পর্যালোচনা করবে। বেলা তিনটার পর তাঁরা এসে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবেন বলে জানানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা আরও জানান, গুদামটি তালাবদ্ধ থাকায় আগুন লাগার সময় ভেতরে কেউ ছিলেন না বলেই তাঁদের ধারণা। তবে নিখোঁজদের বিষয়ে প্রশাসনই আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাবে।
বিপজ্জনক রাসায়নিক সংরক্ষণে নীতিমালার ব্যত্যয়
ফায়ার সার্ভিস আশঙ্কা করছে, গুদামে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক নীতিমালাবিরোধী উপায়ে একসঙ্গে সংরক্ষিত ছিল, যার ফলে বড় ধরনের বিস্ফোরণের আশঙ্কা এখনো থেকেই যাচ্ছে।
মো. নজমুজ্জামান বলেন,
“রাসায়নিক বিষয়টা অত্যন্ত জটিল ও বিপজ্জনক। নীতিমালা না মেনে একাধিক কেমিক্যাল মজুত করলে তা তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।”
আগুন লাগার ঘটনা
গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিয়ালবাড়ির ৩ নম্বর সড়কে একটি টিনশেড দোতলা রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগে। গুদামে আগুন লাগার পর তা বিস্ফোরণের মাধ্যমে পাশের চারতলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে ১৬টি লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
এর মধ্যে ১০ জনের মরদেহ শনাক্তের দাবি করেছেন তাঁদের স্বজনেরা।
পোশাক কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত
চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছিল ‘স্মার্ট প্রিন্টিং’ নামের একটি প্রিন্টিং কারখানা। তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ছিল ‘আরএন ফ্যাশন’ নামের একটি পোশাক কারখানা। আগুনে দুটি কারখানাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, কারখানায় লাগা আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে রাসায়নিক গুদামে ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাস থাকায় সতর্কতামূলক অভিযান এখনো চলছে।