সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সবুজচরে এখন ধানখেতই যেন মাছের ভান্ডার। সরকারি নিষেধাজ্ঞায় সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও ধানখেত থেকে প্রতিদিন উঠছে কোটি টাকার সামুদ্রিক মাছ। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, আসলে মাছের লাভজনক চাষই তাঁদের ধান চাষের প্রধান উদ্দেশ্য।
শীত মৌসুমে শুকিয়ে যাওয়া চর চৈত্রের শেষে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। সেই পানির সঙ্গে আসে সামুদ্রিক মাছ। মাছগুলো জমে থাকা পানিতে ডিম দেয়, ডিম ফোটার পর তা ধান গাছের ছায়ায় বড় হয়। বর্ষা শেষে এসব মাছ ধরা শুরু হয়, আর তা সরাসরি চলে যায় স্থানীয় একতা বাঁধ বাজারে।
চাষিরা জানান, ধানের সঙ্গে মাছ চাষ কম খরচে বেশি আয় নিশ্চিত করছে। স্থানীয় চাষি নুর হোসেন বলেন, “সাগরে নিষেধাজ্ঞার সময় ধানখেতের এই মাছ আমাদের জন্য একপ্রকার নিয়ামত।” চাষি নিজাম উদ্দিনের কথায়, “এখানকার চাষিরা ধানের জন্য নয়, মাছের জন্য ধান চাষ করেন।”
প্রতিদিন সন্দ্বীপের দীর্ঘাপাড় বাজারে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত চলে জমজমাট বেচাকেনা। কোরাল, চিংড়ি, চিরিং, বাটা, ট্যাংরাসহ নানা মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টন। খুচরায় এসব মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে, ফলে প্রতিদিনের মোট বিক্রি প্রায় এক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
চাষি জামাল উদ্দিন জানান, তিন হেক্টর জমিতে ধান ও খড় বিক্রি করে খরচ উঠে যায়, আর মাছ বিক্রির আয় পুরোটা লাভ। তবে এই মাছ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই, যা থাকলে লাভ আরও বাড়ত বলে জানান তিনি।
মাছগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায় নোয়াখালী হয়ে। প্রতিদিনই পাইকাররা এসে ট্রলারে করে মাছ নিয়ে যান। তবে চাষিদের দাবি, মাছ সংরক্ষণের জন্য হিমাগার বা প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা থাকলে আয় আরও বাড়ানো যেত।
এ বিষয়ে সন্দ্বীপ উপজেলার ইউএনও মংচিংনু মারমা জানান, বিষয়টি বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মারুফ হোসেন বলেন, “ধান ও মাছের সমন্বয়ে কৃষকের আয় বাড়াতে সরকারিভাবে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। কৃষি বিভাগ থেকে আমরা সহায়তা দিতে প্রস্তুত।”
সবুজচরের এই অভিনব ধান-মাছ চাষ মডেল এখন টেকসই কৃষির সম্ভাবনাময় উদাহরণ হয়ে উঠছে।