ময়মনসিংহ-ঢাকা রুটে বাস চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ময়মনসিংহ | ১২ অক্টোবর ২০২৫

ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা মোটরযান মালিক সমিতি ও পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। এর ফলে আজ রোববার (১২ অক্টোবর) সকাল থেকে এ রুটে কোনো বাস চলাচল করছে না। হঠাৎ করে এ ধর্মঘটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকায় কেন্দ্রীয় ফেডারেশনের নির্দেশে বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কতদিন এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে, সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত কোনো তথ্য দেননি।

ঘটনাপ্রবাহের সূত্রপাত

গত শুক্রবার (১০ অক্টোবর) রাতে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে ঢাকাগামী একটি বাসে ওঠার সময় এক মুক্তিযোদ্ধা, আবু রায়হান, পরিবহন শ্রমিক অরুণ ঝন্টুর শরীরে ধাক্কা লাগান। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, রায়হান বারবার দুঃখপ্রকাশ করলেও ঝন্টু তার সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন এবং তাকে বাস থেকে নামিয়ে দেন।

এই ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার দুপুর থেকে ময়মনসিংহে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর নেতাকর্মীরা ইউনাইটেড পরিবহনের কাউন্টারের সামনে অবস্থান নেন এবং বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ পরিবহন শ্রমিক অরুণ ঝন্টুকে আটক করে।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পরিবহন শ্রমিকরাও পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় শহরের বাইপাস সড়কে সড়ক অবরোধ করেন। ফলে ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোণা ও জামালপুর থেকে ঢাকাগামী সব বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পাল্টাপাল্টি দাবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন, যার মধ্যে রয়েছে—অভিযুক্ত শ্রমিকের শাস্তি, শহীদ সাগর হত্যা মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল হক শামীমকে গ্রেপ্তার এবং তার মালিকানাধীন ইউনাইটেড সার্ভিসের সব বাস বন্ধ রাখা।

অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিকরা দাবি করেন, আটক সহকর্মীকে মুক্তি দিতে হবে এবং পরিবহন শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সমঝোতার চেষ্টা ও আপস

বিকেলে ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি এবং শ্রমিক নেতাদের মধ্যে একাধিক দফা বৈঠকের পর সমঝোতায় পৌঁছানো হয়। সিদ্ধান্ত হয়, আমিনুল হক শামীমের মালিকানাধীন ১৬টি বাসের চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হবে। এরপর আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয় উভয় পক্ষ।

এখনও বন্ধ রয়েছে রুট

যদিও স্থানীয় পর্যায়ে কিছুটা সমঝোতা হয়েছে, তবে ময়মনসিংহ-ঢাকা রুটে এখনো বাস চলাচল পুরোপুরি শুরু হয়নি। ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব আব্দুর রব আকন্দ রতন বলেন, “কেন্দ্রীয় ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাস চলাচল আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আলোচনা চলছে।”

যাত্রীদের দুর্ভোগ

এ রুটে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। হঠাৎ করে বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই বিকল্প পরিবহন না পেয়ে রাস্তায় অপেক্ষা করছেন। বিশেষ করে রোগী, নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ ছিল চোখে পড়ার মতো।


এই ঘটনাটি শুধু একটি বাস শ্রমিক-যাত্রী দ্বন্দ্বে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক এবং সামাজিক পক্ষগুলোর দাবি-দাওয়ার পাল্টাপাল্টি বাস্তবতা। যত দ্রুত সম্ভব রুটটি সচল না হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Check Also

চার দাবিতে আন্দোলনে নামছেন ফেল করা শিক্ষার্থীরা

২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নজিরবিহীন ফল বিপর্যয়ের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন অকৃতকার্য …

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।