গাজীপুর মহানগরের জরুন এলাকায় অবস্থিত কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের চারটি কারখানায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি নতুন করে ১৭০ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করেছে কর্তৃপক্ষ। আগামী ১ নভেম্বর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
১ অক্টোবর প্রকাশিত এক অফিসিয়াল নোটিশে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বাক্ষর করে এ সিদ্ধান্ত জানান। নোটিশে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির নিট কম্পোজিট ডিভিশন, স্পিনিং ডিভিশন, কটন ডিভিশন ও কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেড ইউনিটগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া, ১৭০ জন শ্রমিককে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত চাকরিতে বহাল রাখা হবে এবং ১ নভেম্বর থেকে তাঁদের চাকরি বাতিল বলে গণ্য করা হবে। ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের নামের তালিকাও নোটিশে প্রকাশ করা হয়েছে। নোটিশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী তাঁদের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করা হবে।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, বাজারের অস্থিতিশীলতা, ব্যাংকের সঙ্গে আর্থিক হিসাবের জটিলতা, কাঁচামালের ঘাটতি এবং পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ না থাকার কারণে উৎপাদন কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাহত হচ্ছে।
কারখানার কয়েকজন শ্রমিক অভিযোগ করেছেন, প্রতিষ্ঠানটি বারবার বন্ধ ঘোষণার নামে ধাপে ধাপে শ্রমিক ছাঁটাই করছে। তাঁদের দাবি, কারখানাগুলো পুরোপুরি বন্ধ না থাকলেও এমন ঘোষণা দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, “প্রতিবারই কিছু সময়ের ব্যবধানে বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়, এরপর কিছু শ্রমিককে বাদ দেওয়া হয়। এটা এক ধরনের কৌশল।”
দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত আবদুল হাকিম নামের আরেক শ্রমিক বলেন, “এই কারখানায় কাজ করে জীবন চলে। এখন বয়স হয়েছে, চাকরি হারালে অন্য কোথাও চাকরি পাওয়া কঠিন হবে।”
কেয়া কসমেটিকস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারখানাগুলোতে বর্তমানে দুই হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মরত আছেন, যাঁদের মধ্যে প্রায় এক হাজার প্রতিবন্ধী শ্রমিক। ব্যাংক জটিলতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি আমদানি কার্যক্রম ও পণ্য উৎপাদনে সমস্যায় পড়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “ব্যাংক থেকে এলসি জটিলতা, কাঁচামাল ঘাটতি ইত্যাদি সমস্যার কারণে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। তবে নতুন কোনো সম্ভাবনা তৈরি হলে আবার কারখানা চালু করার চেষ্টা থাকবে।”
এদিকে, গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার আমজাদ হোসেন বলেন, কারখানার পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে একটি বন্ধের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে চলতি বছরের মার্চ মাসে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড প্রায় ২,২০৩ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করেছিল। সে সময় শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। এবার নতুন করে আরও ১৭০ জন শ্রমিক চাকরি হারাতে যাচ্ছেন।
শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের ধাপে ধাপে ছাঁটাই এবং অনিশ্চিত উৎপাদন কার্যক্রম গাজীপুরের শিল্প পরিবেশ ও শ্রমিকদের জীবন-জীবিকায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।