প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৫
চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন করে মাশুল বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। এই মাশুল পুষিয়ে নিতে ফ্রান্সভিত্তিক শিপিং কোম্পানি সিএমএ–সিজিএমসহ কয়েকটি কোম্পানি পণ্যের পরিবহন খরচে সারচার্জ আরোপ করলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ এর কড়া অবস্থান নিয়েছে।
সারচার্জ আরোপ করায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সিএমএ–সিজিএম কোম্পানির সাতটি জাহাজের অনুমতি বাতিল করেছে। এর ফলে এসব জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার খালাস বা লোড করতে পারছে না।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাহাজ পরিচালনার অনুমতিপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল যে, সারচার্জ আরোপ করা যাবে না। সেই শর্ত লঙ্ঘন করায় সিএমএ–সিজিএম-এর সাতটি জাহাজের অনুমোদন সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাহাজগুলোর মধ্যে দুটি ইতিমধ্যে বন্দরের জলসীমায় পৌঁছে গেছে, কিন্তু জেটিতে ভিড়তে পারেনি। পরিস্থিতি সামাল দিতে অবশেষে ফ্রান্সের এই কোম্পানি সারচার্জ প্রত্যাহার করেছে।
এদিকে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক এমএসসি এবং ডেনমার্কের মায়ের্সক লাইনও সারচার্জ আরোপ করেছিল। এমএসসি ইতিমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে সারচার্জ প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে। তবে মায়ের্সক লাইন এখনো তাদের অতিরিক্ত চার্জ প্রত্যাহার করেনি।
দেশীয় এইচআর লাইনসও ২৫ থেকে ৩০ ডলার পর্যন্ত সারচার্জ আরোপ করেছে। তারাও এখনো সারচার্জ প্রত্যাহার করেনি বলে জানা গেছে।
ব্যবসায়ী মহলের আশঙ্কা, চাপ পড়বে ভোক্তার কাঁধে
বন্দর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, শিপিং কোম্পানিগুলোর ওপর আরোপিত বাড়তি মাশুল শেষ পর্যন্ত পণ্যের দামে প্রতিফলিত হবে, যার প্রভাব পড়বে ভোক্তার ওপর।
চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের আহ্বায়ক আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শিপিং এজেন্ট বা ব্যবসায়ীরা শুরুতে এই বাড়তি মাশুল পরিশোধ করবেন। পণ্যের দামের সঙ্গে এই বাড়তি মাশুল যুক্ত হলে দিন শেষে সেই চাপ যাবে ভোক্তার ওপর।’
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন মাশুল বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে ১৫ অক্টোবর থেকে। মাশুল বৃদ্ধির হার কিছু ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে।
বন্দরসচিব ওমর ফারুক জানান, শিপিং কোম্পানিগুলোর সঙ্গে নিয়ম অনুযায়ী আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, ‘সারচার্জ প্রত্যাহারে চাপ দেওয়া হয়নি। কিন্তু নিয়ম মানা বাধ্যতামূলক।’
চট্টগ্রাম বন্দরের গেজেট অনুযায়ী, গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাড়তি মাশুলের ঘোষণা দেওয়া হয়, যা এক মাস পর ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে।
প্রথম ধাপে শিপিং এজেন্টদের কাছ থেকে এই মাশুল আদায় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরে তারা আমদানি–রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে তা আদায় করে নেয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বার্ষিক চুক্তির কারণে তাৎক্ষণিক ভাড়া বাড়ানো সম্ভব নয়। ফলে কিছু শিপিং কোম্পানি ‘সারচার্জ’ আরোপের পথ বেছে নেয়।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩ শতাধিক বিদেশি শিপিং কোম্পানি পণ্য পরিবহন করে, যার মধ্যে শীর্ষ ১০টি কোম্পানি পরিবহনের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।