ঢাকা, ১৩ অক্টোবর:
দুর্নীতি ও অসদাচরণের একাধিক অভিযোগে ঢাকার সাবেক চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) রেজাউল করিম চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে আইন মন্ত্রণালয়। সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
আইন ও বিচার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সুপ্রিম জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা, ২০১৭-এর অধীনে রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে যা বলা হয়েছে
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত বিচারকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগসমূহ বিচারকসুলভ আচরণের পরিপন্থী ও বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। তাই বিধি ১১ অনুযায়ী তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
যেসব অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে
সাবেক সিএমএম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ডিবির হেফাজতে থাকা ল্যান্ড ক্রুজার ও আরেকটি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার।
- গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে পূর্বাচলে সাত কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়া।
- আশিয়ান গ্রুপের একটি মামলায় বেআইনি হস্তক্ষেপ করে পাঁচ কাঠার প্লট লাভ করা।
- চট্টগ্রামে অবৈধ অর্থে তিনতলা বাড়ি ও একটি ফ্ল্যাট কেনা।
- ইউনাইটেড হাসপাতালে বিল পরিশোধ না করে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ।
এ ছাড়া আরও একটি গুরুতর অভিযোগে বলা হয়েছে,
স্বৈরাচারবিরোধী মামলায় সাক্ষী হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয় আদালতে এলে রেজাউল করিম ও তৎকালীন অতিরিক্ত সিএমএম আসাদুজ্জামান নুর তাকে ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি থেকে এগিয়ে নিয়ে আসেন ও গাড়িতে তুলে দেন, যা বিচারকের নিরপেক্ষতা ও বিচারিক রীতির পরিপন্থী।
অভিযোগের প্রেক্ষাপটে বিভাগীয় ব্যবস্থা
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই ধরনের আচরণকে আইন মন্ত্রণালয় “অনভিপ্রেত, অবিবেচনাপ্রসূত ও অবিচারকসুলভ” বলে উল্লেখ করেছে। এ বিষয়ে রেজাউল করিমকে ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে অতিরিক্ত সিএমএম মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান নুরের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, কারণ তার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বিচার বিভাগে শুদ্ধি অভিযান?
এই বরখাস্তকে অনেকেই বিচার বিভাগে শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে দেখছেন। বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্ট একযোগে কাজ করছে বলেও আভাস মিলছে সংশ্লিষ্ট মহলে।