ক্ষুদ্রঋণদাতা এনজিওতে বসবে স্বতন্ত্র পরিচালক, বাড়ছে সরকারের নজরদারি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫

দেশের বৃহৎ ক্ষুদ্রঋণদাতা এনজিওগুলোতে (যেমন ব্র্যাক, আশা, টিএমএসএস, বুরো বাংলাদেশ, উদ্দীপন ইত্যাদি) এবার প্রথমবারের মতো স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) এ সংক্রান্ত একটি নতুন বিধিমালার খসড়া তৈরি করেছে, যা শিগগির কার্যকর হতে পারে।

কোন প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে?

খসড়া অনুযায়ী, যেসব ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার বেশি, কেবল সেসব সংস্থায়ই এই নিয়োগ প্রযোজ্য হবে। এমআরএর তথ্য অনুযায়ী, এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ১০০টি।

স্বতন্ত্র পরিচালক হতে যা লাগবে

স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার জন্য থাকতে হবে কমপক্ষে ১০ বছরের সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় চাকরির অভিজ্ঞতা। বয়সসীমা ধরা হয়েছে ৩৫ থেকে ৭০ বছর। একই ব্যক্তি একাধিক প্রতিষ্ঠানে স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না।

নিয়োগ প্রক্রিয়া কেমন হবে?

প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এমআরএর কাছে চারজন প্রার্থীর নাম পাঠাবে। সেখান থেকে এমআরএ দুজনকে বাছাই করে অনাপত্তিপত্র দেবে। পর্ষদে তাঁদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক, এবং তাঁরা দায়িত্ব পালন করবেন একটি মেয়াদে। এমআরএ চাইলে পরবর্তী মেয়াদেও তাঁদের নিয়োগ দিতে পারবে।

সিইও নিয়োগেও আসছে কড়াকড়ি

নতুন খসড়ায় সিইও বা নির্বাহী পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রেও শর্ত দেওয়া হয়েছে। সিইও হতে হলে কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। বয়স হতে হবে ৪০–৬৫ বছরের মধ্যে। নিয়োগের এক মাসের মধ্যে এমআরএর অনাপত্তিপত্র নিতে হবে।

বিতর্ক ও আপত্তি

এই উদ্যোগকে ‘বেআইনি ও অপ্রয়োজনীয়’ বলেছে ক্ষুদ্র অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (সিডিএফ)। তারা ৬ অক্টোবর অর্থ উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়ে হস্তক্ষেপ চেয়েছে।
এছাড়া ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেছেন, ‘‘এই উদ্যোগ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করতে পারে। ব্যাংকে যে মডেল ব্যর্থ হয়েছে, তা এনজিও খাতে কার্যকর হবে—এমন নিশ্চয়তা নেই।’’

টিআইবি-র পর্যবেক্ষণ

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘সুশাসনের জন্য উদ্যোগ প্রয়োজন, তবে এটা যেন স্বতন্ত্রতার ক্ষতি না করে। নিয়ন্ত্রণের নামে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ হলে ক্ষুদ্রঋণ খাতের ক্ষতি হতে পারে।’’

সরকার বলছে কী?

এমআরএর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘‘এটি কোনো হস্তক্ষেপ নয়। আমরা শুধু নিয়ম-কানুন ঠিক করে দিচ্ছি। নিয়োগ দেবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানই। কেউ অনিয়ম করলে তবেই সরকার হস্তক্ষেপ করবে।’’

ক্ষুদ্রঋণ খাতের অবস্থা

২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, এমআরএ ৭২৪টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক প্রায় ৪ কোটি ১৫ লাখ, এবং খাতে কর্মরত প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার জন। বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা

Check Also

রফতানি-রেমিট্যান্সে ঊর্ধ্বগতি, দুই মাসে উদ্বৃত্ত ৪৮ কোটি ডলার

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বাংলাদেশে বৈদেশিক লেনদেনে উদ্বৃত্ত হয়েছে ৪৮ কোটি ডলার, যা …

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।