নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্বজুড়ে উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায় নেতৃত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক হলো আন্তর্জাতিক পেটেন্ট আবেদন বা পেটেন্ট ফাইলিং। বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থা (ডব্লিউআইপিও) পরিচালিত ‘পেটেন্ট কো–অপারেশন ট্রিটি (পিসিটি)’ পদ্ধতির আওতায় পেটেন্ট আবেদন পর্যালোচনা করে প্রকাশিত হয়েছে ২০২৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে পিসিটি সিস্টেমের আওতায় ২ লাখ ৭৩ হাজার ৯০০টি আন্তর্জাতিক পেটেন্ট আবেদন জমা পড়েছে। এসব পেটেন্ট আবেদনের ভিত্তিতে উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশ চিহ্নিত করেছে ডব্লিউআইপিও।
নিচে ২০২৫ সালের সেই শীর্ষ দেশগুলোর তালিকা ও বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো:
১. চীন – ৭০,১৬০টি পেটেন্ট আবেদন
উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। যদিও প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমেছে, তবে দেশটি এখনো শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। সরকারি পেটেন্ট ভর্তুকি হ্রাস এবং মান নিয়ন্ত্রণ কঠোর করায় প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
বিশ্বের সর্বাধিক পেটেন্ট দাখিলকারী প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে চীনেরই। ৫জি প্রযুক্তি, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, টেলিকম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে দেশটি।
২. যুক্তরাষ্ট্র – ৫৪,০৮৭টি পেটেন্ট আবেদন
যুক্তরাষ্ট্র চীনের ঘনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে টিকে রয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং জীববিজ্ঞান খাতে দেশটির শক্ত অবস্থান রয়েছে। উদ্ভাবনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বড় ভূমিকা রাখছে।
৩. জাপান – ৪৮,৩৯৭টি পেটেন্ট আবেদন
উদ্ভাবনের মান ও নিখুঁততা বজায় রেখে জাপান তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। রোবোটিকস, ইমেজিং প্রযুক্তি এবং প্রথাগত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে দেশটি বিশ্বনেতা। টোকিও–ইয়োকোহামা অঞ্চল এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেটেন্ট ক্লাস্টার।
৪. দক্ষিণ কোরিয়া – ২৩,৮৫১টি পেটেন্ট আবেদন
ইলেকট্রনিকস, ডিসপ্লে প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর এবং ব্যাটারির মতো খাতে দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্ভাবন উল্লেখযোগ্য। গবেষণা ও উন্নয়নে সরকারি নীতিগত সহায়তা এবং রপ্তানিমুখী শিল্পনীতি এর প্রধান চালিকাশক্তি।
৫. জার্মানি – ১৬,৭২১টি পেটেন্ট আবেদন
ইউরোপের শিল্পপ্রধান দেশ হিসেবে জার্মানি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। অটোমোবাইল, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়াও এখন ডিজিটাল এবং টেকসই প্রযুক্তিতে গুরুত্ব দিচ্ছে দেশটি।
৬. ফ্রান্স – ৮,১২৫টি পেটেন্ট আবেদন
সবুজ প্রযুক্তি, মহাকাশ এবং শিল্প স্বয়ংক্রিয়করণ খাতে ফ্রান্সের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। রাষ্ট্রায়ত্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিএনআরএস ও সিইএ উদ্ভাবনে মূল ভূমিকা রাখছে।
৭. যুক্তরাজ্য – ৫,৮৬১টি পেটেন্ট আবেদন
স্বাস্থ্যপ্রযুক্তি, ফিনটেক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে যুক্তরাজ্যের অবস্থান দৃঢ়। নারীদের অংশগ্রহণের দিক থেকেও দেশটি শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে। উদ্ভাবনে বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা বড় অবদান রাখছে।
৮. সুইজারল্যান্ড – ৫,৩২৪টি পেটেন্ট আবেদন
ওষুধ, রসায়ন এবং মেডিকেল ডিভাইস খাতে সুইস প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। নোভারটিস এবং রোস উদ্ভাবনে শীর্ষে। মাথাপিছু গবেষণা বিনিয়োগ এবং শিল্প–বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগিতা দেশটির মূল শক্তি।
৯. ভারত – ৪,৫৫২টি পেটেন্ট আবেদন
ভারত শীর্ষ ১০–এ সবচেয়ে বড় অগ্রগতি অর্জন করেছে। ওষুধ, বায়োটেক, সফটওয়্যার ও ইলেকট্রনিকস খাতে পেটেন্ট দাখিলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ বেড়েছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া ও মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগ এ প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
১০. নেদারল্যান্ডস – ৪,৩১০টি পেটেন্ট আবেদন
সেমিকন্ডাক্টর, কৃষিপ্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে উদ্ভাবনের জন্য পরিচিত নেদারল্যান্ডস। পেটেন্ট ফাইলিংয়ের একটি বড় অংশই আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে করা, যা গবেষণায় সহযোগিতার প্রতিফলন।
ডব্লিউআইপিওর এ প্রতিবেদন বিশ্বে উদ্ভাবনী সক্ষমতার চলমান চিত্র তুলে ধরেছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বজায় থাকলেও দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলো বৈশ্বিক উদ্ভাবনে নিজেদের অবস্থান দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করছে। ভবিষ্যতের প্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব পেতে দেশগুলোর এই প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র:
WIPO (World Intellectual Property Organization), PCT Yearly Review 2025.